আর কয়েকদিন পরেই বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এরশাদুল হক টুলু দায়িত্ব হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে বিদায় নিবেন। শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে ওই চেয়ারে বসবেন সদ্য নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান নাহিদ সুলতানা তৃপ্তি। এই অবস্থায় এরশাদুল হক টুলুর চল্লিশ মাসের বকেয়া রাখা সন্মানি ভাতা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে ওই ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ও মহিলা মেম্বাররা। তাদের প্রাপ্য বকেয়া সন্মানি ভাতার কি হবে, দায়িত্ব নিবে কে? এনিয়ে পড়েছে হতাশায়, সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভের। তাই সংশ্লিষ্টদের কাছে তাদের দাবী দায়িত্ব হস্তান্তর ও গ্রহণের আগেই একটা স্থায়ী সমাধান। তাছাড়া ইউনিয়ন পরিষদে এমন অবস্থা চলতে থাকলে সদস্যদের দূর্নীতি করার সম্ভবনা রয়েছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
জানা যায়, উপজেলার ৬নং সান্তাহার ইউনিয়ন পরিষদ ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। একজন চেয়ারম্যান এবং ৩জন সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার ও ৯জন মেম্বার মিলে এই ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। এই জন্য ভাতা হিসেবে সরকার থেকে একজন ইউপি মেম্বার পেয়ে থাকেন ৩৬০০ টাকা এবং ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পাবেন ৪৪০০ টাকা। ২০১৬ সালে এই ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে এরশাদুল হক টুলু নৌকা প্রতিকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম ১৮-২০ মাস সদস্যদের সন্মানি ভাতা দিলেও পরে আর কোন সন্মানি ভাতা দেননি। এতে তাদের প্রাপ্য সন্মানি ভাতা বকেয়া থাকে ৪০ মাসের।
এদিকে চলতি বছরের পঞ্চম ধাপে ইউপি নির্বাচনে দলীয় নৌকা প্রতিকের মনোনয়ন না পাওয়ায় তিনি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেননি। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন নাহিদ সুলতানা তৃপ্তি। এখন শুধু দায়িত্ব হস্তান্তর ও গ্রহণের আয়োজন বাকি। আর হতাশায় ভুগছেন টুলুর ৪০ মাসের সন্মানি ভাতা না পাওয়া মেম্বাররা। তারা আদৌও পাবে কি পাবে না এ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে অনেকের মাঝে। বিগত ২০১১ সালের সান্তাহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম মন্টু দায়িত্বে থাকা অবস্থায় তিনিও মেম্বার ও মহিলা মেম্বারদের ৫৩ মাসের সন্মানি ভাতা বকেয়া রেখে ছিলেন। যা চিরকালের মতো বকেয়া থেকেই যাবে।
মারুফ উল হাসান খান শিপলুসহ একাধিক ইউপি সদস্য অভিযোগ করে জানায়, এরশাদুল হক টুলু দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম ১৮ বা ২০ মাস আমাদেরকে নিয়মিত ভাতা প্রদান করেছেন। এরপর থেকে আস্তে আস্তে ৪০ মাস হয়ে গেলো আর কোন ভাতা দেননি। অথচ ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন খাত হোল্ডিং ট্যাক্স, নাগরিকত্ব, ওয়ারিশ সার্টিফিকেট, ট্রেড লাইসেন্স, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন ফি, ওয়ান পার্সেন্ট, হাট, খাস পুকুর, এসব থেকে যেসব রাজস্ব আদায় হয় সেখান থেকে প্রতি ইউপি সদস্য ভাতা হিসেবে পাবেন ৪৪০০ টাকা। তারা আরও জানায়, আমরা সরকার থেকে ৩ মাস পর পর ১০হাজার৷ ৮০০ টাকা করে নিয়মিত সন্মানি ভাতা পেয়েছি। আর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রাপ্য ভাতা প্রতিমাসে ৪৪০০ টাকা করে গত ৪০ মাস থেকে আমাদেরকে বঞ্চিত করে রেখেছেন টুলু। আমরা একাধিক বার এ ব্যাপারে তাকে জানালেও কোন পদক্ষেপ নেয়নি। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন কাজ হয়নি।
তিনি একদিন এসে তদন্ত করে চলে গেছেন। পরে এ ব্যাপারে আর কোন যোগাযোগ করেননি। যেন কারোই কোন গুরুত্ব নাই। ফলে মাসের পর মাস জমা হতে হতে একজন সদস্যের ১লক্ষ ৭৬ হাজার টাকা এবং ১২জন সদস্য ও সদস্যা মিলে ২১ লাখ ১২ হাজার টাকা যা বকেয়া রেখে দিয়েছেন চেয়ারম্যান এরশাদুল হক টুলু। অথচ নিয়মিত পরিশোধ করলে আজ এত পরিমানে এই ভাতার টাকা জমা থাকত না। তাহলে এই ৪০ মাসের ভাতার টাকা গেল কোথায়?
সান্তাহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এরশাদুল হক টুলু জানায়, পরিষদের খাত থেকে ইউপি সদস্যদের সন্মানি ভাতা দিতে হয়। রাজস্ব আদায় কম হওয়ার কারনে সময় মতো ভাতা দিতে পারিনা। এই চলতি মাসে আমার দায়িত্ব শেষ হবে। এখন বকেয়া থাকলে আর কি করার। টাকা না থাকলে দিব কোথায় থেকে।
আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী অফিসার শ্রাবণী রায় এ বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে চায়না।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।